অন্টারিওতে ‘সন্মান, সুরক্ষা ও মজুরি’র দাবিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আন্দোলন শুরু করেছে
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ, টরন্টো
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে অন্টারিও প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ডের প্রতি ‘সন্মান, সুরক্ষা ও মজুরি’র দাবি সংবলিত সুস্পষ্ট বক্তব্য নিয়ে প্রদেশব্যাপি এসইআইইউ হেলথ্কেয়ার, ইউনিফোর ও কিউপ ইউনিয়নভুক্ত ১৭৫,০০০ স্বাস্থ্যসেবী কর্মীরা এক ভার্চুয়াল আহ্বানে আজ থেকে তাদের আন্দোলন শুরু করেছে।
গত এক বছরে করোনা মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্কন্ধে ন্যস্ত দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মীরা, যাদের অধিকাংশই নারী, তারা অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার ফোর্ডকে শ্রম হরণ করা মান্ধাত্বা আমলের পদ্ধতির পরিবর্তে তাদের মতো কর্মজীবিদের পাশে দাঁড়ানোর আকুল আবেদন জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতে তাদের ‘সন্মান, সুরক্ষা ও মজুরি’র দাবি সংবলিত ওই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে খন্ডকালীন কর্মের পরিবর্তে সুবিধা সংশ্লিষ্ট পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও পরীক্ষাকালীন মজুরি প্রদান, পরিধেয় সুরক্ষা পোষাক সরবরাহ ও ‘মহামারি মজুরি’ বলে গণ্য ৪ ডলারের অতিরিক্ত মজুরি মুখ্য প্রতিপাদ্য হিসেবে প্রতিভাত। এসইআইইউ হেলথ্কেয়ার সংবাদসূত্রের চারটি দাবিতে প্রকাশ- প্রথমত, শোষণমুখী খন্ডকালীন কর্মের বিলোপ ঘটিয়ে পূর্ণ সুবিধাযুক্ত কর্মসংস্থান নির্ধারণ। দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট অসুস্থতায় মজুরি প্রদানপূর্বক ছুটি এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষণ ফলাফল প্রাপ্তি ও অন্তরণে থাকাকালীন মজুরি প্রদান। তৃতীয়ত, নিরাপদ কর্ম পরিবেশের স্বার্থে স্বাস্থ্য কর্মীদের পিপিই প্রদান। চতুর্থত, ‘মহামারিকালীন মজুরি’ হিসেবে ৪ ডলারের প্রারম্ভিক মজুরি সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য বহাল ও স্থায়ীকরণ।
এতে ‘সন্মান, সুরক্ষা ও মজুরি’র দাবি সংবলিত ব্যাজ ধারণ ও প্ল্যাকার্ড হাতে সোমবার ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ সকল স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রদেশের হাসপাতাল, নার্সিং হোম ও অবসরকালীন হোমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। এই কর্মকান্ডগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #রেসপেক্টপ্রটেক্টপে হ্যাসট্যাগে প্রদর্শিত হবে।
আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে এসইআইইউ হেলথ্কেয়ার সভাপতি শার্লিন স্টুয়ার্ডের বক্তব্য হচ্ছে, ‘এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রিমিয়ার ফোর্ড সরকারের কাছে নারী স্বাস্থ্য কর্মীরা কোনো ফাঁকা বুলি শুনতে অনিচ্ছুক। মহামারিতে সন্মুখসারির কর্মজীবি হিসেবে তারা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও মানসিক দুঃচিন্তা নিয়ে তারা কাজ করেছেন বিধায় পরিচর্যা অর্থনীতিতে তাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কার্যকর পদক্ষেপটি দেখতে চান। তাতে বসবাসযোগ্য মজুরির পাশাপাশি কম মজুরি সম্পন্ন পিএসডব্লিউ’র মজুরি ন্যূনতম ঘন্টায় ২৫ ডলার চান। সেটা প্রিমিয়ার ফোর্ড স্বাস্থ্য পরিচর্যায় নিয়োজিত কর্মজীবিদের জন্য তাৎক্ষণিক প্রদান করতে সক্ষম।’
অপরদিকে, ইউনিফোর ইউনিয়নের জাতীয় সভাপতির সহকারী কাথা ফোর্টিয়ার বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারিকালীন পরিচর্যা কর্মের প্রতি অসন্মান দৃশ্যমান এবং সেটি সুদীর্ঘ ব্যর্থতার ফলশ্রুতি, কেননা নারীরা সে দায়িত্বটি পালন করছেন। অধিকন্তু সেটি স্বাস্থ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যা কেন্দ্রে জীবনধারণপূর্ণ অনিশ্চিত নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিফলিত। সুবিধা সংশ্লিষ্ট পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান খুবই দুস্প্রাপ্য এবং শুধুই বাঁচার জন্য তাদেরকে জোরপূর্বক একাধিক কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে।’
আর কিউপভুক্ত অন্টারিও কাউন্সিল অব হসপিটাল ইউনিয়নের সচিব-কোষাধ্যক্ষ শ্যারন রিচার বলেন, ‘প্রায় ২০,০০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মাঝে ২০ জন মারা গেছেন। তারা এন৯৫ মাস্কের উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও সেটি নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে পাননি। তাদেরকে বলা হয়েছে সেটি অপরিহার্য নয়। মাস্কগুলো কঠোর হেফাজতে রাখা হয়েছে। এই নিয়মের পরিবর্তন হওয়া চাই। এই মূল্যবান নারী কর্মশক্তি সন্মান, সুরক্ষা এবং ভালো মজুরির উপযোগী। সেজন্য ক্যুইবেকের মতো এন৯৫ মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি একমাত্র মহামারিকালীন মজুরি ৪ ডলার বৃদ্ধি হবে অন্টারিও সরকারের পক্ষে জোরালো প্রশংসার অভিব্যক্তি।’