উইগুর গণহত্যায় চীনকে দায়ী করেছে কানাডার সংসদ মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএনজি নিউজ, টরন্টো
The Canadian parliament blames China for the Uighur genocide
Muhammad Ali Bukhari, CNNG News, Toronto
গত সোমবার কানাডার মোট ৩৩৮ জন জাতীয় সংসদ সদস্যের মাঝে ২৬৬ জন চীনের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত উত্থাপিত প্রস্তাবের স্বপক্ষে ভোট দিয়েছেন। যদিও অধিকাংশ মন্ত্রীসভার সদস্যরা ভোট প্রদানে অনুপস্থিত ছিলেন। তদুপরি তাতে সুস্পষ্টভাবে হাউজ অব কমন্স চীনে উইগুর ও অপরাপর টার্কিক ভাষাভাষী মুসলিম গণহত্যায় দেশটির নির্বিচার কর্মযজ্ঞকে দোষারোপে সক্ষম হয়েছে।
ওই প্রস্তাবটি সংসদে তোলে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। তাতে বলা হয়েছে, চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে দেশটির রাষ্ট্রীয় কর্মযজ্ঞ ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে গৃহীত নীতিমালা অনুসারে গণহত্যার সামিল। সেক্ষেত্রে কনজারভেটিভ সদস্যরা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষমতাসীন দলীয় এমপি প্রস্তাবের স্বপক্ষে ভোট দেন। এতে চূড়ান্ত ভোট গণনায় দেখা যায়, কোনো প্রকার বিরোধীতা ছাড়াই উপস্থিত ২৬৬ জন এমপি ভোট দেন, কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দুই জন এমপি অনুপস্থিত ছিলেন।
তবে লক্ষণীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ তার মন্ত্রী সভার অধিকাংশ সদস্য ভোট প্রদানে পুরোপুরি বিরত ছিলেন। একমাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক গার্নেও সেখানে উপস্থিত থাকলেও তার ভোট প্রদানের পালা এলে তিনি ‘কানাডা সরকারের পক্ষে’ অনুপস্থিত থাকছেন বলে জানান। বাস্তবে ওই প্রস্তাবটি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছে, যাতে ২০২২ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিক গেমটি অন্যত্র যেন সরিয়ে নেয়া হয়।
ওই প্রস্তাবটি এমন এক পরিস্থিতিতে পাস হয়েছে, যেখানে জাতীয় সংসদ তথা পার্লামেন্ট হিলের বাইরে তীব্র তুষারপাতের মাঝে চীনের সংখ্যালঘু উইগুর সম্প্রদায় ‘উইগুর গণহত্যা বন্ধ হোক’ বক্তব্য সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও নিখোঁজ স্বজনদের ছবি হাতে সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে, আগেই কানাডায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কং পাইয়ো প্রস্তাবটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল বলে তীব্র বিরোধীতা করেন। তার সারবেত্তা কথা, ‘অপপ্রচার ও মিথ্যাচার বন্ধ করুন।’ এমনকী স্বয়ং চীনেও ওই প্রস্তাবের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে। সে সময় স্থানীয় সময়ানুসারে মঙ্গলবার রাজধানী বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়েং ওয়েনবিন কানাডার বিরুদ্ধে চীনের তীব্র বিরোধীতার কথা জানান।
এদিকে কানাডার জাতীয় সংসদে ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদান সম্পন্ন হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্ক গার্নেও একটি বিবৃতি দেন। সেখানে বলা হয়, ‘রিপোর্ট অনুযায়ী জিনজিয়াংয়ে লংঘিত মানবাধিকার অর্থাৎ নির্বিচার আটক, চাপানো রাজনৈতিক জ্ঞানদান, বাধ্যতামূলক শ্রমদান, অত্যাচার ও অস্ত্রোপচারপূর্ণ জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়ে [কানাডা] গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সেজন্য কানাডা অপরাপর আন্তর্জাতিক সঙ্গীর সঙ্গে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে এবং আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গণহত্যা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অবশ্যই নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সাপেক্ষে বাস্তব পরিস্থিতিটি জানতে চাই।’
এসব সত্ত্বেও এটা পরিস্কার নয়, আসলে লিবারেল সরকার চীনের পাণে কীভাবে অগ্রসর হবে। কেননা একদিকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে কানাডায় আটক রয়েছেন হুয়াইয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক মেং ওয়ানঝাও, পক্ষান্তরে চীনে আটক রয়েছেন কানাডার নাগরিক মাইকেল কোভরিগ ও মাইকেল স্পাভোর।
তবে সোমবার সকালে কনজারভেটিভ পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় সমালোচক মাইকেল চং বলেন, চীনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ বেসুমার। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি পালিয়ে যাওয়াদের উদ্ধৃতিতে বলেন, উপগ্রহের চিত্র, ভিডিও ধারণ, প্রমাণাদি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সে সংবাদগুলো তুলে ধরেছে। সেজন্য তিনি বলেন, ‘এটা নৈতিক স্বচ্ছতা তুলে ধরার সময়। আমরা কালক্ষেপণ করতে পারি না, আর সেজন্য বলতে চাই সেটা গণহত্যা।’