কানাডার নির্বাচনে সর্বাধিক ৮ বাংলাদেশি লড়ছেন
২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় কানাডার ৪৪তম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সর্বাধিক ৮ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী মূলধারার তথা লিবারেল, কনজারভেটিভ, এনডিপি ও গ্রীন পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মাঝে প্রথমবারের মতো সৈয়দ মহসিন ও মহসিন ভুইয়া কনজারভেটিভ থেকে যথাক্রমে সারে-নিউটন ও স্কারবরো সাউথওয়েস্ট আসন থেকে এবং গুলশান আকতার এনডিপি থেকে ক্যালগ্যারি কনফেডারেশন ও সানি মীর গ্রীন থেকে অশোয়া আসনে লড়ছেন। পাশাপাশি আফরোজা হোসেন লিবারেল থেকে অশোয়া ও ফয়েজ কামাল এনডিপি থেকে স্কারবরো সেন্টার আসনে দ্বিতীয়বারের মতো এবং এনডিপি থেকে নামির রহমান নায়াগ্রা ওয়েস্ট ও খালিছ আহমেদ ক্যালগ্যারি নোজ হিল থেকে তৃতীয়বারের মতো লড়ছেন, যদিও তাদের মাঝে কেউ এমপি নির্বাচিত হতে পারেননি।
তবু তারা সকলে উচ্চাকাঙ্খী, অনুপ্রাণিত, দলীয় ইস্তেহারে গৌরবান্বিত, এমনকী নিজেদের সক্ষমতা ও অভিপ্রায় তুলে ধরাসহ জনকর্মসূচী ও পরিষেবা সংক্রান্ত সাক্ষাতকার সংবলিত প্রশ্নমালার প্রত্যুত্তরটি বুদ্ধিমত্তায় দিয়েছেন এবং সকলের আর্শীবাদ ও সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন।
যখন এই সকল প্রার্থীদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে- তাদের ভাবনায় এলাকার জনগণের কাছে সবচেয়ে জরুরি ও অপরিহার্য ইস্যু কি, তারা নির্বাচিত হলে কি করে সেগুলো সমাধা করবেন এবং কেনই-বা জনগণ তাদের সেরা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করবেন, তাতে তাদের দেয়া প্রত্যুত্তর এখানে তুলে ধরা হলো-
সৈয়দ মহসিন (কনজারভেটিভ – সারে নিউটন): কানাডার জনগণের জন্য অর্থনৈতিক পুর্নরুদ্ধার কার্যক্রম প্রয়োজন, যা আমাদের কমিউনিটির সকলের পরিচর্যার উপযোগী। রক্ষণশীল কনজারভেটিভ সরকার আগামী এক দশকে একটি দায়িত্বশীল ও বিবেচিত ভাসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়নে সক্ষম। আমাদের ঘাটতি মোচনের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি ব্যয় রোধ আবশ্যক। অর্থনৈতিক অগ্রবিবেচ্য দিকগুলো সামাল দেয়ার সঙ্গে শিশুপরিচর্যা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক কর্মসূচীতে অব্যাহত বিনিয়োগ জরুরি এবং সেগুলোতেই আমি অত্যুৎসাহী।
মহসিন ভুইয়া (কনজারভেটিভ – স্কারবরো সাউথওয়েস্ট): স্কারবরো সাউথওয়েস্টের জনগণের অভিযোগ তাদের এমপি’র প্রতিনিধিত্বে ঘাটতি বিদ্যমান। তাই আমি নির্বাচিত হলে আমার দপ্তরে যারা যোগাযোগ করবেন, তাদের সেবায় নিয়োজিত হব। এখানেই আমার বসবাস, কর্ম ও কর্মযজ্ঞ এবং আমি আপনাদের মূল্যবোধ ও উৎকন্ঠা ধারণের পাশাপাশি বহুজাতিক জনগোষ্ঠির চাহিদা পূরণে সদা সচেষ্ট।
গুলশান আকতার (এনডিপি – ক্যালগ্যারি কনফেডারেশন): অসংখ্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে আমি সুবিধাবঞ্চিতদের পেশাগত উন্নয়ন ঘটিয়েছি। আমি একজন পরিবেশবাদী এবং এই সময়ের অতিরিক্ত তাপদাহ, বনজঙ্গলের বিপুল অগ্নিকান্ড ও বন্যার প্রকোপে তা যৌক্তিক। তাতে আমার প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তা ক্যালগ্যারি কনফেডারেশনের কর্মজীবি মানুষ ও প্রান্তিক কমিউনিটির জন্য অব্যাহত রাখা। এছাড়াও আমি পরিবারসমূহ তথা তাদের সন্তানদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ চাহিদা উপযোগী পরিকাঠামো সৃষ্টিতে আত্মনিবেদিতপ্রান।
সানি মীর (গ্রীন – অশোয়া): আমি নির্বাচিত হলে শূণ্য দূষণ অর্জন, জীবনযাত্রার উপযোগী আবাসনে বিনিয়োগ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিশুপরিচর্যা, সার্বজনীন পথ্যসেবা, নেশা প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য উপযোগ, বয়োজ্যেষ্ঠ সেবা, স্বাস্থ্য, আদিবাসী পুনর্মিত্রতা, পরিচিতি বিদ্বেষ, অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংকট, গণতান্ত্রিক সংস্কার, অপরাধ সংস্কার আইন এবং শিল্প সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার কাজে সচেষ্ট। কারণ, আমি মধ্যবিত্ত সংসার থেকে অন্টারিওতে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি শিক্ষার্থী, তরুণ, অভিবাসী, কমিউনিটির জনসাধারণ ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি নিবেদিতপ্রাণ ও উৎসাহী।
আফরোজা হোসেন (লিবারেল – অশোয়া): অশোয়ায় ব্যয়ানুকূল আবাসন ও শিশুপরিচর্যার পাশাপাশি চিরাচরিত বাস্তুহারা ও অপিয়ড সংকট প্রকট। সেজন্য লিবারেল পার্টি অধিক বাড়ী নির্মাণ, বাড়ী ভাড়া থেকে মালিক হওয়ার কার্যক্রম প্রচলন, উপর্যুপরি উচ্ছেদ রোধ, দিনপ্রতি ১০ ডলারের শিশুপরিচর্যা এবং সকল কানাডিয়ানের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমার লড়াই উন্নততর অশোয়া গড়ে তোলা। আমি জানি সংগ্রামের শেষ পরিণতি। আর আমার বিশ্বাস, একজন নতুন অভিবাসী কিংবা পঞ্চম প্রজন্মের মাঝে কোনোই পার্থক্য নেই এবং সংগ্রামবিহীন সফলতা অর্জন অসম্ভব।
ফয়েজ কামাল (এনডিপি – স্কারবরো সেন্টার): নির্বাচিত হলে আমার প্রতিশ্রুতি স্কারবরো সেন্টারে সুচারুভাবে আবাসনের পাশাপাশি পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়ন ঘটাব, যেখানে জীবনমানের ব্যয়বহুলতায় মানুষ সংগ্রামমুখর এবং তরুণেরা নিজস্ব কমিউনিটিতে বাড়ীর মালিক হওয়ার ভাবনা থেকে বঞ্ছিত। আমি স্কারবরোর জন্য ব্যয়সংকট মোচনে বিল প্রস্তাবনাসহ তা পাশে তৎপর হব। আমার দৃষ্টিপান হবে আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থান এবং মহামারিতে স্কারবরোর বহুজাতিক জনগোষ্ঠি যাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পায়, সেটি নিশ্চিত করা।
নামির রহমান (এনডিপি – নায়াগ্রা ওয়েস্ট): প্রতিনিয়ত অভিন্ন মূলভাবের একটা কথাই প্রতিটি দ্বারেই শুনতে হচ্ছে, তা হলো ব্যয়ানুকূল্য। সেই ব্যায়ানুকূল্য বয়োজ্যৈষ্ঠদের পাশাপাশি কৃষিখাতে প্রয়োজন। আমরা এমন এক পর্যায়ে উপনীত, যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আগের তুলনায় বেশি দিচ্ছে, এবং কার্যত সেটা তারা ফেরত পাচ্ছে না। প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আমার একটাই কারণ, আমাদের জীবনমান যাতে ভালো হোক। আর সেজন্য এক কমিউনিটির বিরুদ্ধে অপরের বিরুদ্ধাচারণেরও কোনো প্রয়োজন নেই।
খালিছ আহমেদ (এনডিপি – ক্যালগ্যারি নোজ হিল): আমি এমন একটা দেশ গড়তে চাই, যেখানে জনগণের থাকবে ভালো কর্মসংস্থান এবং চাহিদাপূরণের সামর্থ্য। কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমি পরিবার ও বয়োজ্যৈষ্ঠদের জন্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ যাতে ব্যয়ানুকূল্যটি পরিব্যাপ্ত হোক, পথ্যসেবাসহ স্বাস্থ্য পরিচর্যার পথটি সুগমের সঙ্গে আবাসন ও উন্নততর পরিষেবা বাড়–ক। অটোয়ায় আমি হতে চাই আপনাদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর।