বাংলাদেশের গ্রামে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আশংকাজনক হারে দ্রুত ছড়াচ্ছে
বাংলাদেশে আগের সহজ হিসেবটি বদলে যাচ্ছে। এতে ভারতে শনাক্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, যে গতিতে সংক্রমণ হচ্ছে তা এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে। সীমান্তের আশপাশের ৩২ জেলার পরিস্থিতি প্রায় এক। স্বাস্থ্য দপ্তর মনে করেছিল, বাংলাদেশে করোনা শহর কেন্দ্রীক এবং গ্রামগুলোতে এতোটা ছড়াবে না। এখন তারাই বলছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী ডা. মোজাহেরুল হক সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যা প্রথমে ভারতে শনাক্ত হয়, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের গ্রামগুলোতে। এতে সঠিক কর্মপরিকল্পনা ব্যতীত এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা মোটেও উন্নত নয়। মনে রাখতে হবে, এতো বেশি সংক্রমণ আগে বাংলাদেশে দেখা দেয়নি। যে কারণে পরিস্থিতিকে দেখতে হবে আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে।
একজন চিকিৎসকের বর্ণনা থেকে গ্রামের চিত্র সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ একেএম জাহিন যান ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানে তার চেম্বার। একে একে ১৫ জন রোগী এসেছেন। এদের ১৪ জনই আসেন জ্বর নিয়ে। ফলে এতো বিশাল সংখ্যক রোগী দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, তিনি হতবাক ও বিস্মিত। এসব রোগীরা কেউই টেস্ট করাতে রাজি নন। শুধু ঠাকুরগাঁওয়ে নয় রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের চিত্র প্রায় একই রকম। হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি নেই। নতুন নতুন ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। রাজশাহী মেডিকেলের ফ্লোরেও কোভিড রোগী শয্যাশায়ী। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেছেন, নতুন ওয়ার্ড করেও সামাল দেয়া যাচ্ছে না। কোভিড ইউনিটে শয্যা আছে ২৬৪টি। এই মুহূর্তে রোগী রয়েছেন ২৭৭ জন। সাতক্ষীরার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার প্রায় ৬০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আরও ৩৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২,৫৩৭ জন। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা হালনাগাদ করেছে। এতে সর্বোচ্চ ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশকে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ভ্রমণ পরিহার করুন। এর পরেও যদি বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে হয় তাহলে আগেই টিকার পূর্ণ ডোজ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। সিডিসি আরও বলেছে, বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে পূর্ণ ডোজ টিকা গ্রহণকারীও ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।
Pic from pixabay.com/