মহামারিতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে এইচঅ্যান্ডএম, নাইকি ও প্রাইমার্ক
নেদারল্যান্ড ভিত্তিক শ্রমাধিকার সংগঠন ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন তাদের মর্মস্পর্শী নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ মহামারিতে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এইচঅ্যান্ডএম, নাইকি ও প্রাইমার্ক তাদের গার্মেন্ট শ্রমিকদের যথেচ্ছ বঞ্চিত করে চলেছে। এই সকল দেশে ৪৯ জন গার্মেন্ট শ্রমিককে মহামারি চলাকালীন পরিস্থিতিতে কতোটা মজুরি, কর্মপরিবেশ ও শ্রমাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে তারই মর্মস্পর্শী চিত্র ওই প্রতিবেদনে ফুটে ওঠেছে।
অর্ধেকের বেশি সেই সকল শ্রমিক ‘ব্রেকিং পয়েন্ট: ওয়েজ থেফ্ট, ভায়োলেন্স অ্যান্ড এক্সিশিভ ওয়ার্কলোডস আর পুশিং গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স টু ব্রেকিং পয়েন্ট ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে গবেষকদের জানিয়েছেন যে, তারা মজুরি কর্তনের শিকার হয়েছেন। এদের প্রায় ৭০ ভাগ শ্রমিক বলেছেন, প্রাক্-মহামারি সময়ের তুলনায় তারা স্বাভাবিক মজুরির চাইতে কম বেতন পেয়েছেন। তাতে তারা মহামারি পরিস্থিতিতে নিদারুন দারিদ্র্যতার কষাঘাতে নিস্পেষিত এবং ক্রমান্বয়ে প্রয়োজন মেটাতে তাদের প্রানওষ্ঠাগত। এতে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তিনটি ব্র্যান্ডের শ্রমিকরাই বেশি বঞ্চিত।
ফলে সরবারহ খাতে গবেষকরা জেনেছেন, মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এইচঅ্যান্ডএম, নাইকি ও প্রাইমার্কের শ্রমিকরা বেশি মাত্রায় মজুরি চুরির শিকার হয়েছেন, যা আপাতদৃষ্টিতে বোঝানো হচ্ছে যে রফতানি খাতে নিজস্ব সিদ্ধান্তে চাহিদা বাতিল কিংবা চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা তা করছেন। সাক্ষাতকার প্রদানকারী শ্রমিকরা এটাও জানিয়েছেন যে, তাতে তাদের মাসিক গড় মজুরি কমে গেছে। ফলস্বরূপ প্রাইমার্কের ১১জন শ্রমিক বলেছেন আনুমানিক তাদের ২৮৯০ ডলার, এইচঅ্যান্ডএম-এর ১৮ জন শ্রমিকের ২৩৬৮ ডলার এবং নাইকির ১৩জন শ্রমিকের ১৫২৭ ডলার কম দেয়া হয়েছে। অথচ ওল্টোভাবে এই শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের উৎপাদনমাত্রা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি অনিরাপদ কর্মপরিবেশের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এতে প্রতিবেদন রচয়িতা ম্যাগ লুইসের ভাষ্য, ‘হতাশাগ্রস্থ এই শ্রমিকরা যে কাহিনী আমাদের জানিয়েছেন, তাতে চলতি মাস তাদের দিন চলবে কি করে সেই উৎকন্ঠাই দৃশ্যমান। সাধারণ অর্থে, এই মহামারিতে ওই ব্র্র্যান্ড কোম্পানিগুলো তাদের শ্রমিকদের দুঃসহ যাতনার মাঝে ফেলে দিয়েছে।’
দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্ট রফতানির দেশ বাংলাদেশে একজন শ্রমিক বলেছেন, ‘আমাকে আমার দেনা পরিশোধের পাশাপাশি পাণীয়জল ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে, অথচ আমার মাসিক আয় সেই সক্ষমতার বাইরে। আমি দেখতে চাই না কম শ্রমিকের পরিবর্তে উচ্চমাত্রায় উৎপাদন চাহিদা পূরণ। কারণ, আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো কোনো উপার্জনটাই নেই।’
এমন পরিস্থিতিই সরবরাহ খাতে উল্লেখিত বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিদ্যমান থাকায় ওই প্রতিবেদনে তারই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
Pic taken from ব্রেকিং পয়েন্ট: ওয়েজ থেফ্ট, ভায়োলেন্স অ্যান্ড এক্সিশিভ ওয়ার্কলোডস আর পুশিং গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স টু ব্রেকিং পয়েন্ট ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক