রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ‘হতাশ’, কানাডা কী ভাবছে?
টরন্টো, জুন ২১: গতকাল বিশ্ব শরণার্থী দিবসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে ঘিরে মায়ানমার বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ‘অতিমাত্রায় হতাশ’ হয়েছে, কেননা তা ততোটা ফলপ্রসূ প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারেনি।
এতে গত শনিবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, ‘জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তটি উদ্ভূত রোহিঙ্গা সংকট পুরাপুরি তুলে ধরা এবং তা নিরসনে যথেষ্ট মাত্রায় কোনো প্রস্তাবনা পেশ করেনি।’ তাতে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ‘মায়নমার পরিস্থিতি’ সংক্রান্ত দেশটির চলমান গণতান্ত্রিক সংকট নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ১১৯টি দেশ পক্ষে, ১টি বিপক্ষে এবং ৩৬টি অংশগ্রহণহীন থেকেছে।
ওই সিদ্ধান্ত মায়ানমারের চলমান গণতান্ত্রিক সংকটকে আলোকপাত করেছে, যেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে আটকের পরিপ্রেক্ষিতে আসিয়ান রাষ্ট্রসংঘের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, এমনটাই নিউইয়র্কের জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানা হয়েছে।
তথাপি ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মায়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো কার্যকর প্রস্তাবনা রাখা হয়নি উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়েছে, ‘না সেখানে গুরুত্বারোপ কিংবা রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযোগী নিরাপদ, টেকসইপূর্ণ ও সন্মানজনক কোনো বিষয়ই গুরুত্ব পায়নি।’
এতে বাংলাদেশ মিশন থেকে বলা হয়েছে, ওই সিদ্ধান্তে সম্মিলিত প্রয়াসে রোহিঙ্গা সংকটের আদি উৎপত্তি নিয়েও কোনো কথা বলা হয়নি। ফলে তাতে বলা হয়েছে, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মৌলিক বিষয়াবলী না থাকায় বাংলাদেশ ভোটদানে অনুপস্থিত থেকেছে।’ ফলশ্রুতিতে ইসলামী সম্মেলনভুক্ত দেশ, আসিয়ান ও সার্কের বেশ কিছু দেশও ভোটদানে অনুপস্থিত থেকেছে।
এটাই যখন ঘটেছে, সেক্ষেত্রে ইতিপূর্বে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে কানাডার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মানবিক দুর্গতি ও বোঝাপড়া চূড়ান্ত করতে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক ডাকেন। এমনকী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রীও উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক আয়োজনে সহযোগি আয়োজক হন, যেখানে গোল টেবিল বৈঠকে লিঙ্গ বৈষম্যহীন মানবিক সংকট নিরসনের বিষয়টি আলোচিত হয়।
এরপর মায়ানমারে কানাডার বিশেষ দূত বব রে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুজাতিক পর্যায়ে মুখ্য আন্তর্জাতিক সহযোগিদের অনুপ্রাণিত করার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হন। এমনকী বাংলাদেশের ত্রাণ শিবিরে গিয়ে তিনি শরণার্থীদের শিক্ষাদান ও জীবনমানের অপরিহার্যতার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। এক্ষেত্রে তার সে প্রয়াস আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কানাডার নেতৃত্বের পাশাপাশি মায়ানমারে দীর্ঘ স্থায়ী শান্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারটি প্রতিভাত হয়।
এখানেই শেষ নয়, বরং কানাডা মায়ানমারে ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে পাঁচটি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা করে। এই প্রকল্পগুলো নিরাপত্তাহীন মানুষ, বিশেষ করে নারী ও বালিকাদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি তাদের জীবনধারা তৈরির উপযোগী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের বিষয়টি তা হলে কবে শেষ হবে?
In the pics – from Global Affairs of Canada – Minister Freeland’s missions for the Rohingya Crisis