রাতানসি কি আইন ভাঙ্গতেই আইন প্রণেতা হয়েছেন?
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ, টরন্টো
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের বিষয়াবলী তুলে ধরাই সমাজবিজ্ঞানের কাজ, তবে সেটা খবরের কাগজের সংবাদ কিংবা সাধারণ জ্ঞান বা গাল-গল্প নয়। সেখানে লৌকিকতাবর্জিত বা ভাঁড় গোষ্ঠীর নেতৃত্ব যেমন প্রতিভাত, তেমনি গোড়া রাজনীতিকের কাছে পৃথিবীটা দ্বৈত বিরোধীতা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়, যদিও উদারপন্থীদের কাছে ভিন্নতাটি দৃশ্যমান। আবার তাতে পরিবার ‘ক্ষুদে সমাজ’ হিসেবে বিবেচিত হলেও থাকে আপন রাজনীতি, অর্থনীতি, মূল্যবোধ ও সংঘাত প্রশমনের উপায়। সেজন্য সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সম্পর্কের তত্ত্বকেই উদ্ভাবণ করে। সে কারণে কানাডায় আইন ভেঙ্গেছেন এমন একজন আইন প্রণেতার পরিণতি এ লেখার প্রতিপাদ্য।
সাম্প্রতিক সিবিসি এক সংবাদে প্রকাশ, টরন্টো ডন ভ্যালি ইস্টের এমপি ইয়াসমিন রাতানসি গত নভেম্বরে লিবারেল ককাস ত্যাগ করে স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সংসদীয় বিধিবিধান ভঙ্গ করে নিজের নির্বাচনী এলাকার অফিসে বোনকে চাকরি দিয়ে তিন বছরকালীন সরকারি তহবিল থেকে বেতন দেয়ায় ৯,৩৯১.২৭ ডলার অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। এতে স্বয়ং ওই এমপি’র সাবেক কর্মচারিরা অভিযোগ এনে বলেছেন, তিনি বিষয়টা ধামাচাপা দেবার অপচেষ্টা চালিয়েছেন; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কানাডার জাতীয় সংসদ তথা হাউজ অব কমন্সের অতি গোপন অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পর্ষদ, যা জাতীয় সংসদের যাবতীয় অর্থ ব্যয় পর্যবেক্ষণ করে, তারা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যামেরা মিটিংয়ে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। ওই পর্ষদের চেয়ারম্যান ও হাউজ অব কমন্সের স্পিকার অ্যান্থনি রোটা এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিন মাসের পর্যবেক্ষণটি শেষ হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই অর্থদন্ডের পাশাপাশি ‘রাতানসি ওই পর্যবেক্ষণে তেমন কোনো সহযোগিতা জোগাননি।’ অপরপক্ষে, গত বছরের সূচনায় রাতানসি ফেসবুক পোস্টে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বোনকে চাকরি দেবার ‘সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল’ এবং ‘পরিস্থিতির প্রায়শ্চিত্তে’ লিবারেল দলের ককাস ত্যাগ করেছেন, জানিয়েছেন। তবে গত সোমবার এক বিবৃতিতে রাতানসি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, নৈতিক কমিটিতে তার তদন্ত চলাকালীন পর্ষদ নিজেই সিদ্ধান্তটি দিয়েছে। তার কথা, ‘অতীতে [পর্ষদ] কখনো অনুরূপ হস্তক্ষেপ কিংবা হুবহু তৎপরতা চালায়নি, যেখানে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংঘাত ও নৈতিক কমিশনার নিয়োজিত।’ আরও বলেন, ‘আমি অনুরোধ জানিয়েছি অন্যদের বেলায় যেমন সৌজন্যতা দেখানো হয়েছে, তার বেলাতেও তেমনটি যেন দেখানো হয়। এখানে সহযোগিতা বা অসহযোগিতার কোনো কমতি ঘটেনি, বরং নিরপেক্ষতা ও শ্রদ্ধাশীল পদ্ধতির অনুসরণ প্রত্যাশিত ছিল।’
সিবিসি আরও জানিয়েছে, রাতানসি’র বেশ কিছু সাবেক কর্মচারি বলেছেন, তিনি তার বোনকে কমপক্ষে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল অবধি সময়ে নিয়োগ দিয়েছেন এবং পরে আবারও ২০১৭ সালে তাকে নিয়োগ দেন, যখন সংসদীয় বিধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যে কোনো এমপি’র জন্য ভাই-বোনকে চাকরি দেয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। এতে হাউজ অব কমন্সের তথ্যানুসারে সাধারণত এমপি’র জন্য নিজস্ব বাজেট থাকে এবং সেখান থেকে বছরে সর্বোচ্চ ৮৯ হাজার ৭০০ ডলার পর্যন্ত নির্বাচনি আসনের দপ্তরে কর্মরত একজন সহকারিকে বেতন দেয়া যায়। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, রাতানসি সম্ভবত তিন বছরে নিজের বোনকে ২ লাখ ৬৯ হাজার ১০০ ডলার বেতন দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি থেকে স্পিকার বরাবরে চিঠি দিয়ে রাতানসির বিরুদ্ধে ‘যথোপযুক্ত পদক্ষেপ’ নিতে অনুরোধের পাশাপাশি তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি কনজারভেটিভ এমপি মাইকেল বেরেট বিষয়টিকে ‘লিবারেলের আরেক লাগাতার বেপরোয়া আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে গত বছর ১০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাতানসি’র আচরণকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি তার অফিস ব্যবস্থাপনায় ‘গভীরভাবে হতাশ’।
এতে প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিরোধী দল যাই বলুক না কেন, বাস্তবে রাতানসি’র বিরুদ্ধে হাউজ অব কমন্সের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পর্ষদের সিদ্ধান্তই আপাতদৃষ্টিতে যথেষ্ট এবং তাতে ঘটনার বিবরণে সুস্পষ্ট যে, রাতানসি আইন প্রণেতা হয়েও আইন ভঙ্গ করেছেন।