করোনা সংক্রমণ ২ কোটি ছাড়াতেই সাবেক সেনা চিকিৎসকদের নিয়োগ দিচ্ছে ভারত
টরন্টো, মে ১০: দিনে করোনা মৃত্যুসংখ্যা ৪ হাজার হওয়ার সঙ্গে দেশজুড়ে লকডাউনের তাগিদে ভারত কয়েক শত সাবেক সেনা চিকিৎসককে নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে প্রায় ৪ শত সাবেক চিকিৎসককে ১১ মাসের চুক্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে বলে রোববার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে দেশটির বহু রাজ্যে বিগত কয়েক মাসে লকডাউন আরোপের পাশাপাশি অপরাপর রাজ্যে জনচলাচল নিষিদ্ধসহ সিনেমা, রেস্তোরা, বার ও সপিংমল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর ক্রমাগত দেশময় লকডাউন আরোপের চাপ বাড়ছে, যদিও তিনি গত বছর তা প্রথম ঢেউয়ের সময় আরোপ করেছেন। এখন তিনি বিগত দুই মাসে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি সত্ত্বেও ধর্মীয় সমাবেশ ও নির্বাচনি প্রচারণায় লোকসমাগমের কারণে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
ভারতীয় মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) বিভিন্ন রাজ্যে রাতে ঘোষিত কারফিউ বা সাময়িক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে একটি ‘পুরোপুরি, পরিকল্পিত ও পূর্বঘোষিত’ লকডাউন চাচ্ছে। শনিবার তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে, ‘করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবহেলাজনিত নিষ্ক্রিয়তায় আইএমএ সম্পূর্ণ হতবাক ও বিস্মিত।’
এদিকে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ডা. অ্যান্থোনি ফাউচি বলেছেন, তিনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে পুরোপুরি দেশ বন্ধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘আপনাদের দেশে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের অনেক রাজ্যই লকডাউন দিয়েছে, কিন্তু সংক্রমণের বিস্তাররোধে তার প্রবাহটি ছিন্ন করতে হবে। আর সেজন্য চাই পুরোপুরি লকডাউন।’ ফাউচি এ কথা এবিসি টেলিভিশনের ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে বলেছেন।
ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে প্রকাশ, গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে ৪,০৯২ জন মারা গেছেন, ফলে মোট মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৬২ জন। আর নতুন সংক্রমণ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮ জন, যা মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২৩ লাখে উপনীত করেছে।
এছাড়া অক্সিজেন ও হাসপাতাল শয্যার অভাবের পাশাপাশি মর্গ ও শ্মশানঘাটে ঠাই নাই অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাস্তবে প্রকৃত সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যা জানা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
অথচ বিশ্বের সবচাইতে বড় প্রতিষেধক উৎপাদক দেশ হিসেবে সেখানে মাত্র ৩ কোটি ৪৩ লাখ মানুষকে অর্থাৎ মাত্র ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে টিকাকরণ করা হয়েছে, যা সরকারি কো-উইন পোর্টাল থেকে জানা গেছে। এমতাবস্থায় সারা বিশ্ব থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেন্ট্রটর, ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ সাহায্য আকারে ভারতেকে দেয়া হচ্ছে।
বিশেষভাবে কানাডা তার জাতীয় জরুরি কৌশলগত মজুত থেকে অ্যান্টি ভাইরাল রেমডেসিভিরের ২৫ হাজার ভায়াল ও ৩৫০টি ভেন্টিলেটর ভারতের এই সঙ্গীন অবস্থায় সাহায্য হিসেবে পাঠিয়েছে। গত বুধবার অন্টারিও প্রদেশের ট্রেন্টন থেকে একটি সামরিক বিমানে করে তা পাঠানো হয়েছে। উপরন্তু কানাডা সরকার ১০ মিলিয়ন ডলার ভারতীয় রেডক্রস সোসাইটিকে আর্থিক সাহায্য জুগিয়েছে।