অন্টারিও বাজেট নিয়ে ঘাটতিজনিত উৎকন্ঠা
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ
টরন্টো, মার্চ ২৬: গত পরশু অর্থমন্ত্রী পিটার বেথলেনফালভি অন্টারিও প্রদেশের ২০২১ সালের জন্য ১৮৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটটি পেশ করেছেন। সেক্ষেত্রে করোনা মহামারিতে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে আপাতদৃষ্টিতে অন্টারিও বাজেটে ঘাটতি মোচন হতে কমপক্ষে ২০২৯ সালটি গড়িয়ে যাবে। কারণ, গত বছরই প্রদেশে ৫.৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক সংকোচন ঘটেছে। তবু অর্থমন্ত্রীর কথা, ‘আমি অন্টারিও বাসীকে আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা এই মহামারি জয় করবোই, এবং এরপর আমরা আরও সুদৃঢ়তায় ফিরবো।’ কিন্তু উৎকণ্ঠা নানা কারণে থেকেই গেছে।
২৩১ পৃষ্টা সমৃদ্ধ ওই বাজেটে প্রধান প্রতিপাদ্য দুটি: স্বাস্থ্য ও অথেনৈতিক পুনরুদ্ধার। এতে পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য সুবিধা, অনুদান ও কর রেয়াত ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে আশানুরূপ আর্থিক জোগান দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাতে কর্ম প্রশিক্ষণ, বিশেষত যারা সুদক্ষ পেশায় যুক্ত হতে চান, তাদের জন্য অর্থ জোগান রাখা হয়েছে। কারণ অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, মহামারির জন্য নারীর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ও পুরুষে ৩.১ শতাংশ কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। তথাপি লক্ষণীয়ভাবে, মহামারি প্রশমনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধিকার গ্রুপের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতায় বেতনভুক্ত ছুটির বিধান রাখা হয়নি। এমনকী বৃহত্তর টরন্টো এলাকার বিতর্কিত মহাসড়ক ৪১৩ এর জন্যও যেমন কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি, তেমনি স্কুল বোর্ডগুলোতে চলমান মহামারিতে সুনির্দিষ্ট তহবিলও দেয়া হয়নি।
দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালেই ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ঘাটতি ঘটেছে; যদিও ৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসেবে ২০২১-২২ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল তা হবে ৩৩.১ বিলিয়ন ডলার। আর গত বছর গড়পড়তা মাথাপিছু ব্যয় হ্রাস পাবার ফলে অন্টারিওবাসী সামগ্রিকভাবে সেকেন্ড কোয়ার্টারেই ১৪৮ বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় সাধনে সক্ষম হয়েছেন। যার ফলে ২০২৪ সাল নাগাদ অন্টারিও ‘হাফ ট্রিলিয়ন’ ডলারের দেনায় পড়বে।
এসব সত্ত্বেও ওই বাজেটে ‘অন্টারিও কোভিড-১৯ চাইল্ড বেনিফিট’ থাকছে। এবার সে অর্থ দ্বিগুণ হয়ে শিশু প্রতি ৪০০ ডলার ও বিশেষ প্রয়োজন সমৃদ্ধ শিশুর ক্ষেত্রে ৫০০ ডলার করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘সিএআরই’ বা ‘চাইল্ড এক্সেস অ্যান্ড রিলিফ ফ্রম এক্সপেন্সেস’ হিসেবে এককালীন ২০ শতাংশ পর্যন্ত কর রেয়াত দিচ্ছে, যা শিশু প্রতি ২৫০ ডলারের উপরে দেয়া হবে। এতে প্রদেশের খরচ হবে ৭৫ মিলিয়ন ডলার। আর অস্থায়ী ত্রাণ হিসেবে ৩ লাখ পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তদুপরি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার উপযুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে ২০ হাজার ডলার দেয়া হবে। পর্যটন খাতে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কাজ হারানোর ফলে ট্যুর অপারেটরদের জন্য থাকছে ১০০ মিলিয়ন ডলার। তাতে ১০০ জন কর্মী সমৃদ্ধ প্রতি অপারেটরকে দেয়া হচ্ছে ২০ হাজার ডলার। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে মহামারি সংক্রান্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার, যার মাঝে গ্রামীণ আদিবাসীদের টিকা প্রদানে ব্যয় হবে ৫০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া পরীক্ষণ ও অনুসন্ধান খাতে বরাদ্দ থাকছে ২.৩ বিলিয়ন ডলার। তাতে স্বাস্থ্য খাতে গত বছরের ৬৬.৭ বিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে চলতি বছরের বাজেট দাঁড়িয়েছে ৬৯.৮ বিলিয়ন ডলার।