বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ১৪ জঙ্গিকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ মৃত্যুদন্ড দিয়েছে
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমজি নিউজ
ঢাকা, মার্চ ২৩: ২১ বছর আগে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত।
এতে আজ মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় দেন। রায়ে ১৪ জঙ্গিও প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ বা গুলি করে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমেই এ ধরনের নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামি হলেন মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান ওরফে রাশেদ খাঁ, সরোয়ার হোসেন মিয়া, তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল, শেখ মোহাম্মদ এনামুল হক, মোসাহেব হাসান ওরফে রাশু, আমিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন পলাতক। তাঁরা হলেন আজিজুল, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল ও মোসাহেব।
আসামিদের সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) সদস্য বলে তদন্তে উঠে এসেছে। কারাগারে থাকা নয়জন আসামিকে রায়ের সময় আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ও এর আশপাশের এলাকায়ও নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল।
এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র-রাষ্ট্রদ্রোহ ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ।
হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড এবং ১৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে হত্যাচেষ্টা মামলায় আপিলের রায়ও হয়েছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায়ে ১০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর দন্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে। ১৪ বছর দন্ডিত অপর এক আসামিকে খালাস দিয়েছে উচ্চ আদালত।
অন্যদিকে, হত্যার ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের ৫০ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় ১১ মার্চ।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান, হেদায়েত উল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির মৃত্যুদন্ড চেয়েছিল। সেজন্য রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া।