‘মহাসাগর, আমাদের জলবায়ু ও আবহাওয়া’
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ
টরন্টো, মার্চ ২৩: আজ বিশ্ব আবহাওয়া দিবসকে সামনে রেখে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) মহাসাগরের সংকটাপন্ন বিষয়টিই তুলে ধরেছে। মহাসাগরের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেটাই প্রতিপাদ্য। এতে দ্রুত বদলাচ্ছে মহাসাগরের আবহাওয়া। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতার সঙ্গে বাড়ছে ¯্রােতের উষ্ণতা। মহাসাগরের উপরিভাগের বাতাস হয়ে উঠছে ভয়ংকর। ফলে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, হারিকেনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে। বাড়ছে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি।
কোভিড-১৯ মহামারি এই বিপদকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেজন্য মহাসাগরের আবহাওয়াগত পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা অনেকটাই থমকে গেছে। ফলে তথ্যপ্রাপ্তির উৎস সংকুচিত হয়েছে। আগাম পূর্বাভাস দেয়াটাও জটিল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনকার মতো হুমকির মুখে আগে কখনোই পড়তে হয়নি মহাসাগরকে। সংস্থাটির মতে, সময়মতো তৎপর না হলে গভীর সংকটে পড়বে মহাসাগর। তাতে বাধাগ্রস্থ হবে বাণিজ্য। সংকটে পড়বে মানবজাতি।
বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনায় মহাসাগর অনেকটা উপেক্ষিত থাকলেও মঙ্গলবার বিশ্ব আবহাওয়া দিবস সামনে রেখে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) এবার মহাসাগরের সংকটাপন্ন হওয়ার বিষয়টিই সামনে এনেছে। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মহাসাগর, আমাদের জলবায়ু ও আবহাওয়া’।
ইউএন নিউজ জানিয়েছে, গত বছর আটলান্টিক মহাসাগরে রেকর্ডসংখ্যক হারিকেনের দেখা মিলেছে। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাংশ ও ভারত মহাসাগরে সাইক্লোন বেশি হয়েছে। এর প্রধান কারণ মহাসাগরের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত হুমকি অনেকটাই উপেক্ষিত থেকে যায়।
ডব্লিউএমও’র মহাসচিব রাষ্ট্রদূত পিটেরি টালাস বলেন, ‘বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, ভয়ংকর ¯্রােত কিংবা সাইক্লোনের কবল থেকে এসব মানুষ ও তাদের বসতি রক্ষা করা জরুরি।’
উষ্ণতার পরিবর্তন মহাসাগরের বাস্তুসংস্থানের ওপর যে প্রভাব ফেলবে, তার জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও সতর্ক করেছেন পিটেরি টালাস। তাঁর ভাষ্য, এর জের শত শত বছর ধরে পৃথিবীকে টানতে হবে।
সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি বিশ্বের ৬০০ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত। বিশ্ববাণিজ্যে প্রতিবছর ৩১.৭ বিলিয়ন ডলার জোগান দেয় ব্লু ইকোনমি। তাই মহাসাগরের আচরণ পরিবর্তন বিপুল পরিমাণ মানুষের মহাসাগরকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকায় আঘাত হানবে বলে সতর্ক করেছে ডব্লিউএমও।
প্রতিবছরই মিলিয়ন ডলারের পণ্য ও জীবন কেড়ে নেয় সাগর-মহাসাগর। এর পেছনে তীব্র বাতাস, উচ্চ ¯্রােত, কুয়াশা, বজ্রপাত, বরফখন্ডসহ চরম আবহাওয়াকে দায়ী করেছে ডব্লিউএমও। মহাসাগর বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার ৯০ শতাংশের বেশি শোষণ করে নেয়। এতে মহাসাগরের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে যায়। মহাসাগরের উষ্ণ ¯্রােত হাজার কিলোমিটার দূরের মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ডব্লিউএমও। সংস্থাটি বলছে, যদি গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমে আসে ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা সম্ভব হয়, এরপরও ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০-৬০ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে। আর যদি গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনে লাগাম টানা সম্ভব না হয়, তবে এর পরিমাণ ৬০-১১০ সেন্টিমিটার হতে পারে।