ক্যাসেট টেপের উদ্ভাবক ল্যু ওটেন্স আর নেই
মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমটি নিউজ
বিশ্বের সঙ্গীত প্রেমীদের যিনি আধৃুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রথম কমপ্যাক্ট ক্যাসেটে শোনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, সেই টেপের উদ্ভাবক ল্যু ওটেন্স আর নেই। ডাচ্ সংবাদমাধ্যমে সে কথা জানানো হয়েছে। গত ৬ মার্চ তার প্রয়াণ ঘটে এবং মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
ল্যু ওটেন্স ডাচ্ ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান ফিলিপসে কাজ করতেন। সেখানেই কর্মরত থাকাকালীন, ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে তিনি ক্যাসেট টেপ তৈরির কাজ শুরু করেন। বার্তা সংস্থা এনপিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি সবার জন্য সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য গান শোনার একটি উপায়ান্তর তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কারণ, সে সময়ের রিল-টু-রিল টেপ আকারে অনেক বড় ছিল।
শুরুতে তিনি পকেটে নিয়ে বেড়ানোর মতো কাঠের তৈরি একটি প্রোটোটাইপ বা পরীক্ষামূলক সংস্করণ বানান। এতে বুঝতে সুবিধা হয়েছিল, তার উদ্ভাবণের বিষয়টি কী।
ল্যু ওটেন্সের উদ্ভাবণ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিনামূল্যে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে কর্মস্থল ফিলিপসকে পর্যন্ত রাজি করান। ১৯৬৩ সালে প্রথম কমপ্যাক্ট ক্যাসেটের প্রচলন করে ফিলিপস। পরে বাকিটা হয় ইতিহাস। তবে সেটা ওটেন্সের ক্যারিয়ারের শেষ নয়। ফিলিপস এবং জাপানি প্রতিষ্ঠান সোনিকে কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি) তৈরিতেও সাহায্য করেন।
গান শোনায় ক্যাসেট টেপ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা গত শতকে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন। ক্যাসেট না থাকলে মিক্সটেপ এবং প্লেলিস্টের মতো ব্যাপারগুলোও মানুষের চিন্তায় দাঁনা বাধতো থাকত না। তার চেয়েও বড় কথা, গান শোনার যন্ত্র সঙ্গে নিয়ে বেড়ানোও ওই ক্যাসেট টেপ উদ্ভাবণের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
২০১৩ সালে ক্যাসেট উদ্ভাবণের ৫০তম বার্ষিকীতে ল্যু ওটেন্স টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কমপ্যাক্ট ক্যাসেটকে ‘শিহরণ জাগানোর মতো’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
বাস্তবিকই তা ছিল শিহরণপূর্ণ এবং সে কারণে ফিলিপস মিউজিয়াম ডিরেক্টর ওলগা কুলেন বলেন, ‘ল্যু প্রযুক্তিপ্রেমী হিসেবে অসাধারণ মানুষ ছিলেন, এমনকী তার ক্যাসেট উদ্ভাবণটিও একটি অতি বিনয়ী আত্মপ্রকাশ।’
১৯২৬ সালে জন্ম নেয়া এই উদ্ভাবক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজ পরিবারের জন্য একটি রেডিও বানান, যার অ্যানটেনা ছিল লক্ষ্যভেদমুখী যাতে নাৎসীদের প্রযুক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা সত্ত্বেও মানুষ সঙ্গীত আপ্লুত হতে পেরেছে।
প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্যাসেট:অ্যা ডকুমেন্টারি মিক্সটেপ’-এর নির্মাতা জ্যাক টেইলরের কথা, ‘ক্যাসেট আমাদের স্বরধ্বনি ব্যবহারটি শিখিয়েছে, এমনকী কষ্টসাধ্য মিক্সটেপের সঙ্গীতটি পর্যন্ত অন্যের কন্ঠে শোনা থেকে অনুপ্রাণিত করেছে।’ সম্ভবত সেটাই সত্যি। সেজন্য এই ইন্টারনেটের এই যুগেও নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাসেট টেপ। আর সেটা কেবলই নস্টালজিয়ার বহিঃপ্রকাশ!