৫৫ বছরের নিচে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিত করেছে ‘এনএসিআই’

মোহাম্মদ আলী বোখারী, সিএনএমএনজি নিউজ

টরন্টো, মার্চ ৩০: গতকাল কানাডার ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইম্যুনাইজেশন, সংক্ষেপে ‘এনএসিআই’ প্রদেশগুলোকে নিরাপদজনিত উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত করার সুপারিশ করেছে এবং ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ প্রদেশ তা অনুসরণে সম্মত হয়েছে। এতে কারণ হিসেবে ইউরোপের দেশগুলোতে মূলত মহিলাদের দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়কে উল্লেখ করেছে। যদিও ইতিমধ্যে কানাডায় এই টিকার ৩ লাখ ডোজ দেয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং কোথাও কোনো রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেনি, এমনকী ‘এমআরএনএ’ বৈশিষ্ট্যের ফাইজার ও মর্ডানার টিকার ক্ষেত্রেও তা ঘটেনি।

এ বিষয়ে ‘এনএসিআই’-এর সহ-সভাপতি ডা. শেলি ডিকস সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, কম ‘প্লেটলেটস’ সমৃদ্ধ     ‘থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’ রোগে আক্রান্ত রোগির ক্ষেত্রে ‘উপযোগি অনিশ্চয়তা’ থাকায় ‘আগে-ভাগে সাবধানতা অবলম্বনে’ তার কমিটি এই সুপারিশে উপনীত হয়েছে। যদিও এ পর্যন্ত ইউরোপে ‘থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া’র ঘটনা কদাচিৎ হওয়ায় এ সম্ভাবনা রয়েছে গড়ে সোয়া লাখ থেকে ১০ লাখ মানুষে মাত্র ১ জন। তা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ঔষধ তদারকি সংস্থা, ইউরোপীয়ান মেডিসিনস এজেন্সি বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়নি। তারা সুনির্দিষ্টভাবে ওই টিকা নেয়ার ১৪ দিনের মাঝে ৫৫ বছরের নিচে মহিলাদের ১৮টি সংশ্লিষ্ট ঘটনার উদাহরণ দিয়েছে।

তবে কানাডার জনস্বাস্থ্যের উপ-প্রধান হাওয়ার্ড ঝুঁ বলেছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকোর টিকা নেয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, বুকে ব্যাথা, পা ফুলে যাওয়া, পেট ব্যাথা, হঠাৎ মাথাব্যাথা কিংবা চোখে ঘোলা দেখার মতো উপসর্গ হলে সত্ত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আর যাদের এ ধরণের উপসর্গ ২০ দিনে দেখা দেয়নি, তারা নিরাপদে রয়েছেন।

তা হলে কেন ৫৫ বছরোর্ধ্ব মানুষের জন্য এই টিকা সুপারিশ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘এনএসিআই’-এর চেয়ার ডা, ক্যারেলিন কোয়াচ-থান বলেন, কারণ তরুণদের মাঝে এই রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে। তার ভাষায়, কোভিড-১৯ প্রকোপের ঝুঁকি এড়াতে বয়স্করা যে কোনো টিকাই গ্রহণ করতে পারেন, অন্তত বাইরের রক্ত জমাট বাঁধার দিকটি বিবেচনায়।

আর এই টিকা কতটুকু নিরাপদ, এ বিষয়ে হেলথ্ কানাডার ব্যুরো অব মেডিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক মার্ক বার্থিইয়ম বলেন, লাখো মানুষ যখন একটি টিকায় চিকিৎসাপ্রাপ্ত হয়, তখন কদাচিৎ ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। তার কথা, ‘এই টিকায় সেটা হতেই পারে।’ সেজন্য হেলথ কানাডার প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ডা. সুপ্রিয়া শর্মার অভিমত, ‘আমাদের সেই অস্বাভাবিক দিকটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।’    

এই প্রেক্ষাপটে গতকাল সন্ধ্যায় অ্যাস্টাজেনেকা এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ‘এনএসিআই’-এর সিদ্ধান্তকে তারা সন্মান জানালেও গত সপ্তাহ থেকে এখন পর্যন্ত হেলথ্ কানাডা তাদের টিকার বিষয়ে কোনো বিরূপ সিদ্ধান্ত নেয়নি।